সড়কটি চলাচল অনুপযোগী হলেও নির্বিকার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
নির্মাণ কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ধীরগতির অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
তারা জানান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের দায়সারা দায়িত্ব পালন ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের কারণে সড়কটিতে বার বার বরাদ্দ দেয়ায় সরকারের কোটি কোটি টাকা তছরুপ হয়েছে।
পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে দেবীগঞ্জ উপজেলা সদরে যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। সাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যান, সিএনজি অটোরিকশা, ট্রাক, ট্রাক্টর, পিকআপ ভ্যান, বাসসহ নানা যানবাহন চলে।
সড়কে বর্তমানে পাঁয়ে হেঁটে চলাও দুরূহ হয়ে পড়েছে। সড়কের টুনিরহাট থেকে ভাউলাগঞ্জ পর্যন্ত অংশে ছোট-বড় খানা খন্দে ভরে গেছে। আবার পাকা সড়কেরও কোথাও কোথাও পিচ, সুরকি, ইট উঠে গিয়ে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে এই দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। সড়কের ওপর জমে থাকা পানিতে বোঝাই যায় না কোন গর্ত কত বড়, আর কোন গর্তে কাঁদা আছে।
এ সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়ছেন পথচারীরা। যানবাহনের পাশ দিয়ে চলতে গিয়ে সড়কের গর্তের পানি ছিটকে গিয়ে কাপড় নষ্ট হচ্ছে।
অন্যদিকে রাস্তা খারাপ হওয়ায় অতিরিক্ত ভাড়া দিলেও অনেক সময় এসব যানবাহন যেতে চায় না। ছোট খাট যানবাহনগুলো প্রায়শই উল্টে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। সড়কটির বেহাল দশার কারণে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
২০১৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে পঞ্চগড় ভাউলাগঞ্জ সড়কের বোদা জিসি টু ভাউলাগঞ্জ জিসি সড়কের সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়ক প্রায় ১ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে রেইনকো ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কার কাজ করেন। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় এবং এলজিইডির কর্মকর্তাদের দায়সারাভাবে দায়িত্ব পালন করায় সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার তিন-চার মাসের মধ্যে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে ২০১৯ সালের আগস্টে পঞ্চগড়-দেবীগঞ্জ সড়কের কালিয়াগঞ্জ থেকে বড়শশী পর্যন্ত ৫ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এমএইচ করপোরেশন অ্যান্ড মীম ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৯ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজ শুরু করে। কিন্তু গত এক বছর ধরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ধীরগতিতে কাজ করায় সংস্কার কাজ শেষ হচ্ছে না।
চলছি বছরের আগস্ট মাসে সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত ৩০ ভাগ কাজও শেষ করতে পারেনি। যেটুকু কাজ হয়েছে তাতেও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করার অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
ইতোমধ্যে সড়কটির একাধিক স্থানে পিচ ঢালাইয়ে পর ফাঁটলের সৃষ্টি হয়েছে। সংস্কার কাজে অনিয়ম ও ধীরগতির কারণেই কাজ শেষ হতে না হতেই আবারো খানাখন্দে ভরে গেছে সড়কটি। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তেমন নজরদারি না থাকায় দীর্ঘ এক বছর ধরে বেহাল অবস্থায় রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি। এটি দ্রুত সংস্কার এবং এলজিইডি ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
জেলার বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের মালেকাডাঙ্গা এলাকার নাসিরউদ্দিন জানান, সড়কটির বেহাল অবস্থার কারণে বাড়ি থেকে হাটবাজার, উপজেলা সদর ও জেলা সদরে যাতায়াতে সময় ও ভাড়া দুটোই বেশি গুনতে হচ্ছে।
একই এলাকার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বার বার সংস্কার করলেও সড়কটি কোনো সময়ই ভালো থাকে না। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতাই এর অন্যতম কারণ। ঠিকাদার দিনে রাতে কাজ করলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাউকে দেখা যায় না। ফলে আমরা সব সময় দুর্ভোগের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছি।’
বড়শশী ইউনিয়নের বকদুলঝুলা এলাকার রুবেল হোসেন জানান, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে কাজ করায় সড়কটিতে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের প্রায় ৫ কিলোমিটার রাস্তা ছোট-বড় খানাখন্দে ভরে গেছে।
আজিজার রহমান নামে এক পথচারী জানান, সড়কটিতে এত বেশি গর্ত যে কোনো যানবাহন যাতায়াতে শরীরের ওপর কাঁদা পানি ছিটকে পড়ে কাপড় ভিজে নোংরা হয়ে যায়।
এলজিইডির দেবীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. মোমিনুল ইসলাম জানান, ২০১৮ সালের জুন মাসে ১ কোটি ১২ লাখ ৮৩ হাজার ৫৬৪ টাকা ব্যয়ে সাড়ে তিন কিলোমিটার সড়কের সংস্কার করা হয়। ঠাকুরগাঁও রেইনকো ট্রেডার্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজটি করেছিল। সড়কটি খানাখন্দে ভরে গেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
সংস্কার কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএইচ করপোরেশন অ্যান্ড মীম ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মোস্তাক হোসেন বাবু বলেন, ‘রাস্তা তো পড়ে আছে, আমি তো কাজ শুরুই করিনি। আবার সময় বাড়িয়ে নিতে হবে।’
কেন কাজ শুরু করেননি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বিষয়টি ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বলতে বলেন।
পঞ্চগড় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামছুজামান বলেন, ‘ওভার লোড নিয়ে যানবাহন চলাচল করায় সড়কটি অল্পতেই নষ্ট হচ্ছে। সড়কটির খানাখন্দে ভরা অংশটুকু এ বছরেই মেরামত করে দেয়া হবে। বৃষ্টিপাত হওয়ায় আমরাই ঠিকাদারকে কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। কাজে কোনো অনিয়ম হয়েছে কিনা এ বিষয়টি আমরা দেখছি। সড়কের খানাখন্দ সংস্কারের জন্য বাজেট দেয়া হয়নি তবে বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।’